-অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন

আমাদের গৃহিত কিছু-কিছু পদক্ষেপ পর্যটন বান্ধব নয় বলে অনেকাংশে সমস্যার সৃস্টি হচ্ছে।

একটু পরিস্কার করে বলি পাকিস্তান আমলে এই পর্যটন বেশ জাকিয়ে ব্যবসা করেছে। পরবর্তীতে এমন কেন হলো তা সবাই বুঝতে পারছেননা । এই প্রতিষ্টানটি এখন একটি কাগজের হাতি বললে অত্যুক্তি হয়না্। বাংলাদেশ হওয়ার পর থেকে অনেক কর্মকর্তা এসেও কোন লাভের মুখ দেখাতে পারেননি।বিশাল জায়গা জুড়ে এই প্রতিষ্টানটি মৃতবৎপড়ে আছে। রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলেই বরফগলা ঠান্ডা পরিবেশ।লোকজন নেই খুব একটা। কিছু কিছু আড্ডা ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না।বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় এপর্যন্ত প্রতিষ্টানটি কোন লাভের মুখ দেখতে পায়নি। পাশাপাশি পর্যটনের আরো কিছু স্থাপনা রয়েছে যা বেসরকারী প্রতিষ্টানের কাছে চড়া মুল্যে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারাও না পেরে ছেড়ে দিয়েছে। আপাতত যেন তেন প্রকারেন এই সব মোটেল হোটেল কটেজ চলছে। কিছু কটেজ এনজিও প্রতিষ্টানকে ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওখানে অফিস করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন বিদেশীদের এভাবে ঢালাওভাবে পর্যটন ভাড়া দিয়ে দিলে আর পর্যটন করার দরকার কি। বর্তমানেতো প্রায় একশতের উপর এনজিও ককসবাজারে কাজ করছে। তাদের ভাড়া দিলে সরকারের অনেক টাকা আসবে। কিন্তু এটি কি পর্যটন বান্ধব কাজ? ইউ এন এইচ সি আর বিগত কয়েক যুগ বেশ কয়েকটি কটেজ ভাড়া নিয়েছেন। কেম্প ককসবাজার শহর থেকে ‍অনেক দুরে হলেও , ককসবাজারেই তারা অফিস করছেন । হয়তো তাদের আইনী কোন নিয়মে এটা হচ্ছে । কিন্তু আমার প্রশ্ন পর্যটন শিল্পের এসব এনজিওকে বছরের পর বছর ভাড়া দেওয়াতে তো কেউ কিছু বলেনি । এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার পর্যটন কিন্তু শুধু মুস্ঠিমেয় কিছু লোকের জন্য নয় । পর্যটন সবার জন্য হওয়া উচিত। আমরা দেখেছি , সমুদ্রকে কখনো এক্সক্লুসিভ জোন করে শৈবাল বরাবর সাধারন লোকজনকে হাঁটতে দেওয়া হয়নি বেশকিছু বছর আগে । কিন্তু তা তারা রাখতে পারেনি । এখন পত্র পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি বঙ্গবন্ধু , প্রধানমন্ত্রি এবং তার আত্মীয়দের ছবি লাগিয়ে সমুদ্রপাড়ের কিছু হোটেল ব্যাবসায়ীরা সরকারী জায়গা দখলের পায়তারা চলছে । এসব প্রশাসনের ভালোই নজরে এসেছে। পদক্ষেপও নিয়েছেন । এ জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ। যেখানে যেখানে একসক্লুসিভ রেসিডেস্সিয়াল এরিয়া করার কথা সেখানে এখন রমরমা হোটেল মোটেল জোন করে ব্যাবসায়ীরা ভাড়া গুনছেন। কোথাও কোন একটুও পার্কি সাইড রাখেনি । তীব্র যানজট এড়াতে ককসবাজার উন্নয়ন কর্তপক্ষ (কউক) যখন ্এসব বাস কাউন্টার সরাতে বলে তখন তারা বাদ সাধেন । অথচ বড় বড় অট্টালিকা তৈরী হলেও তাদের নিজস্ব কোন পার্কিং সাইড নেই । এসব বিষয় শৈবাল সংকটের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
অনেকে বলে থাকেন ,আমাদের সুস্থ আবহাওয়া নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। তাই শৈবালকে আমরা এভাবে ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দিতে পারিনা। কথাটি এক দম ঠিক। কিন্তু আপনি শিশুদের জন্য, আগামী প্রজন্মের জন্য কি একবারও ভেবে দেখেছেন? ককসবাজারে কোন পার্ক নেই। নেই কোন সুস্থ মন নিয়ে বেড়ানোর জায়গা। পরযটন মৈাসুমে সমুদ্রে বেড়াতে গেলে সুস্থ আবহাওয়া পরিবেশ এর জন্য কি করতে পেরেছেন? নিরাপদে বেস্টনীবিহীন সুমদ্রে গোসল করা, সমুদ্রে একটু আরামে বসার জায়গা নেই।
সুদীর্ঘ ২৫ বছরেও ককসবাজারে সুস্থ কোন বিনোদন এর জন্য শিল্প সংস্কৃতির বিকাশের ব্যাবস্থা নেই। সামান্য ফেনী শহরে, কুমিল্লা শহরে এবং আরো অন্যান্য শহরে শিল্পকলার যে উন্নয়ন হয়েছে, আমাদের এখানে তা নেই। এ নিয়েও শৈবাল সংকটের মতো ভাবতে হবে। এসব শুদ্ধ সংস্কৃতি না থাকলে জে এম বি পয়দা হবে নিশ্চিত।
এখন আমার প্রশ্ন হলো আমরা শৈবাল রক্ষায় অনেক মানববন্ধন করছি, সভা মিটিং করছি । সাথে সাথে এসব বিষয়েও নজর দেওয়া উচিত নয়কি? বর্তমান সী গাল এর সামনে একসময় ঝাউগাছ কেটে রাস্তা করতে চেয়েছিল বলে কত বাদ প্রতিবাদ দেখেছি। কই এখন তো সুন্দর রাস্তা তৈরী হয়েছে। কারও কথা , প্রতিবাদ এসব গেলো কই ।

আমার ব্যক্তিগত অভিমত বর্তমান যে রাস্তাটি সীগাল করেছে তা অনেক সুন্দর এবং পরিবেশবান্ধব। ঝাউগাছ কাটা হলেও অনেক গাছ রোপন করে একটি নৈসর্গিক পরিব্শে তৈরী করা হয়েছে । তাই আমার অভিমত মৃতবৎ শৈবালকে বাঁচার লক্ষে সবাই মিলে একটা ভাল সিন্ধান্ত নিলে ভালো হয়। যেমন কিভাবে এটিকে নতুন রুপে অর্থকরী প্রতিষ্টান, পর্যটন বান্ধব করা যায়। এসব্ নিয়ে চিন্তা করার সময় পেরিয়ে গেছে । অনেকে ১৩০ একরের টাকার হিসাব নিয়ে লিখেছেন। অরিয়নের ঘোষিত ৬০ কোটি টাকা খুব কম, অপ্রতুল বলেছেন। ৪৪০ কোটি টাকা দিয়ে শৈবাল ভাড়া দিলে কি তারা খুশী হব্নে? আসলে টাকা দিয়ে কোন কাজ নয়। পর্যটনকে সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে। সাধারন মানুষ কিভাবে সমুদ্র পাড়ে অবস্থিত একটি হোটেলে গিয়ে ১৩০/ টাকার চেয়ে বেশী টাকা দিয়ে এককাপ চা খেতে পারবে, আপনারাই বলুন ।

আমরা দেখেছি হেচারী রোড নড়বড়ে কাটের ফ্লাইওভার রোড করে বিনপি আমলে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করতে । সমুদ্রে পর্যটকদের জন্য শৈবালের একসক্লুসিভ জোন করতে। আমরা দেখেছি টেকনাফে নেটং হোটেলের মৃতবৎ পড়ে থাকতে। এবং আরো কত কি?

লেখক: সভাপতি, সঙ্গীতায়তন, কক্সবাজার।